ঘর হলেও হয়নি রাস্তা যাতায়াত নিয়ে বিপাকে ৩৯ টি পরিবার
আব্দুর রাজ্জাক রাজ , ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম):-
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প (আশ্রয়ণ প্রকল্প নামেও পরিচিত), বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন একটি সরকারি প্রকল্প যার মাধ্যমে ভূমিহীন ও গৃহহীন এবং যার জমি আছে ঘর নেই এমন পরিবারের জন্য বাসস্থান নির্মাণ করা হয়।
প্রকল্পের বিশেষত্বসমূহের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য বিশেষত্ব হলো “গ্রামেই শহরের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণ পুনর্বাসিত পরিবারের জন্য বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয় এবং প্রকল্প স্থানে নিরাপদ সুপেয় পানির জন্য নলকূপের সংস্থান করা হয়। পুনর্বাসিত পরিবারের জন্য কমিউনিটি সেন্টার, মসজিদ/মন্দির ও কবরস্থানসহ পুকুর খনন ও অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য রাস্তা নির্মাণ করে দেওয়া হয়।”
কিন্তু কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলাধীন ২ নং শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের আওতাভুক্ত সোনাইকাজী আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর ৩৯ টি ঘরে যাওয়ার রাস্তা হচ্ছে অন্যের জমির ক্ষেতের চিকন আইল” এবং ৩৯টি পরিবারের জন্য চারটি টিউবওয়েল । সোনাইকাজী আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ উক্ত ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডে ধরলা নদীর তীরে অবস্থিত এবং শেখ হাসিনা ধরলা সেতু’র পশ্চিম-উত্তরের ২০০ মিটার সামনে ।এই প্রকল্পের ভূমিহীন ও গৃহহীন সুবিধাভোগীগণ আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প-এর মাধ্যমে ১ম থেকে ৪র্থ পর্যায় পর্যন্ত তাদের এ ঘরগুলো পেয়েছেন । কিন্তু কষ্ট ও বেদনাদায়ক বিষয় হচ্ছে তাদের আবাসনে যাওয়ার জন্য কোন রাস্তার ব্যবস্থা এ পর্যন্ত করে দেওয়া হয়নি । এ আবাসনের চর্তুরদিকে মানুষের আবাদী জমি যা কৃষি কাজে সকল মৌসুমে ব্যস্ত থাকে । সোনাইকাজী‘র এ আবাসনবাসী এসব আবাদি জমির চিকন আইল ব্যবহার করে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ করে থাকে । দীর্ঘদিন থেকে এ আইল দিয়ে অতি কষ্টে চলাচল করলেও এখন আর আবাসন সংলগ্ন জমির মালিকেরা যাতায়াত করতে দেয় না । তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় জমির আইল ব্যবহার করলে আইল ভেঙ্গে গিয়ে জমির ফসলের ক্ষতি হয় । সেচ মৌসুমে আইল দিয়ে হাঁটার কারণে জমির আইল ভেঙ্গে এক জমির পানি অন্য জমিতে চলে যায় ।এতে জমির ক্ষতি ও ঝগড়া-বিবাদ হয় । এ প্রকল্পের ১৭ নং ঘরে বসবাসকারি মাহাবুব আলম বলেন, আমাদের আইল দিয়ে হাঁটতে দেয় না ।আইলের মধ্যে কাঁটা ও বেড়া দিয়ে রাখে জমির মালিকেরা ।
নুরনাহার বেগম বলেন, শুকনো মৌসুমে এ চিকন আইল দিয়ে হাটা গেলেও বর্ষাকালে তা তলিয়ে যায়, তখন আর হাঁটা যায় না , দূর্ঘটনা ঘটে । যেকোন সময় পা পিছলে জমিতে গিয়ে পড়তে হয় । এতে জমির ফসলের ক্ষতি হয়, জমির মালিকেরা রাগ করে, ঝগঢ়া বিবাদ ও অপমাণ করে আমাদের ।এ আবাসনে বসবাসকারী আলমগীর নামে একজন বলেন, পাঁচ/ছয় মাস আগে একজন রুগী এখানে অসুস্থ হয়ে পড়লে আমরা অতি কষ্টে চার-পাঁচজন ধরে ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে ৩০০ মিটার দূরে মেইন রাস্তায় নিয়ে যাই এবং এতে রোগী আরও গুরতর অসুস্থ্য হয়ে পড়ে ।
এখানকার একজন মহিলা সুবিধাভোগী, মহিমা বেগম এর বক্তব্যে জানা যায় যে, শুধু রাস্তা নয় এখানে ৩৯ টি পরিবারের জন্য মাত্র চারটি টিউবওয়েল যা সিরিয়াল ধরে অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে পানি নিতে হয় । একটু বৃষ্টি হলেই আবাসনের ভিতরে পানি জমে থাকে । আমরা অনেক বার মেম্বার, চেয়ারম্যানকে জানাইছি তাঁরা প্রতিবারেই আশা দেয় কিন্তু কাজ এখনও হয়নি ।
সোনাইকাজী আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর ওয়ার্ড মেম্বার জনাব মোঃ জমসেদ আলী এসব প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আমরা কর্তৃপক্ষকে তাদের সব সমম্যার কথা জানিয়েছি কিন্তু এখনও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করনে নি তাঁরা । আমার করণীয় কিছুই নাই এখানে ।
উক্ত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহোদয় জনাব মোঃ শরীফুল আলম মিয়া বলেন, তাদের খোঁজ-খবর আমি নিয়মিত নিয়ে থাকি এবং তাদের সমস্যাগুলো আমি মাসিক মিটিং এ প্রতিবারই তুলে ধরি ।তিনি আরও বলেন, এ আবাসনের পূর্ব দিক দিয়ে রাস্তা হবার কথা যা এখনও অন্যের জমির ক্ষেতের চিকন আইল, এবাবের বর্ষা মৌসুম বের হলে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে একটা ব্যবস্থা নিতেই হবে ।
ফুলবাড়ী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জনাব মোছাঃ মলিহা খানম বলেন, সোনাইকাজী আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর এ ধরণের সমম্যা থাকলে আমরা খোঁজ খবর নিয়ে তা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা করবো ।
দৈনিক আলোর প্রতিদিন এর প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না