রাঙ্গাবালী যুব ফোরামের প্রশিক্ষণ সমাপনীতে সনদপত্র বিতরণ

১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫১:৩৭

নিজস্ব প্রতিনিধি

গলাচিপা,পটুয়াখালী।

আজ ১৭ অক্টোবর, ২০২৪, পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা অফিসার্স ক্লাব মিলনায়তনে যুব ফোরাম সদস্যদের অংশগ্রহ‌নে তিনদিনব্যাপী প্রশিক্ষণের সমাপনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই প্রশিক্ষণের মূল বিষয় ছিল “সংবেদনশীল ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠনে যুব নেতৃত্ব”। রাঙ্গাবালী উপজেলার যুব ফোরামের মোট ৩০ জন সদস্য এই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন। যুবরা সামাজিক নেতৃত্বের মাধ্য‌মে সমাজ উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে, সেই বিষয়ে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করেছেন। প্রশিক্ষণ সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, “তরুণ প্রজন্মই জাতির ভবিষ্যৎ। তারা যদি সংবেদনশীলতা ও সহনশীলতার আদর্শে নিজেদের গড়ে তোলে, তাহলে সমাজে অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠা পাবে। এই প্রশিক্ষণ তাদের সেই নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জনে সহায়তা করেছে। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ ফোরকান মোল্লা। তিনি বলেন, “বর্তমান বিশ্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব অস্বীকার করা যায় না। এই প্রশিক্ষণ যুব সমাজকে কিভাবে দায়িত্বশীলভাবে এই মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে সমাজে পরিবর্তন আনা যায়, সেই জ্ঞান দিয়েছে।” অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন নাগরিক নেতা ও সাংবাদিক মোঃ ইউসুফ আলী। তিনি তরুণদের প্রতি আহ্বান জানান, “যুব নেতৃত্বের মাধ্যমেই সমাজে মানবিক মূল্যবোধ ও সংবেদনশীলতা প্রতিষ্ঠিত হবে। আমাদের সমাজে অসাম্প্রদায়িকতা ও সহমর্মিতার চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব এখন আপনাদের হাতে। প্রশিক্ষণের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান প্রধান অতিথি মিজানুর রহমান প্রশিক্ষণার্থীদের সনদপত্র প্রদান করেন। এই সনদ তাদের অর্জিত জ্ঞান এবং দক্ষতার স্বীকৃতি হিসেবে প্রদান করা হয়। প্রশিক্ষণার্থীরা সনদপ্রাপ্তির মুহূর্তে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যতে সমাজ উন্নয়নে তাদের দায়বদ্ধতার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। এই প্রশিক্ষণে সহায়কের দায়িত্ব পালন করেন রূপান্তরের গোলাম মোস্তফা এবং মুনজিলা। এই প্রশিক্ষণের মাধ্য‌মে যুব সমাজকে সংবেদনশীল ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করা, যাতে তারা সমাজে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। প্রশিক্ষণে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় কিভাবে যুবকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার করে গঠনমূলক ও উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারে। এছাড়া সমাজে বিরাজমান বৈষম্য, অসামাজিক কার্যক্রম এবং ধর্মীয় সহিংসতা প্রতিরোধে যুব নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে বিস্তর আলোচনা করা হয়। তিনদিনের প্রশিক্ষণে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল: সংবেদনশীলতা ও সহনশীলতা: কিভাবে একজন যুবক সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী ও সম্প্রদায়ের প্রতি সংবেদনশীল হতে পারে এবং তাদের সাথে সমানভাবে আচরণ করতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়। বিভিন্ন কর্মশালার মাধ্যমে এই বিষয়টি অনুশীলন করা হয়, যেখানে প্রশিক্ষণার্থীরা বাস্তব উদাহরণের মাধ্যমে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করেছেন। অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠন: প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীরা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সাথে কিভাবে বন্ধন গড়ে তুলে এবং ধর্মীয় সহনশীলতা বজায় রেখে কাজ করতে পারেন, সে বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। সমাজে বিভেদের রাজনীতি এবং ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানো প্রতিরোধে যুবকদের করণীয় নিয়েও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। নেতৃত্বের গুণাবলী: একজন যুবক কিভাবে সমাজের নেতৃত্ব দিতে পারে, কিভাবে তার আদর্শ ও মূল্যবোধের মাধ্যমে অন্যদের অনুপ্রাণিত করতে পারে, সেই বিষয়ে আলোচনা করা হয়। প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে নেতৃত্বের দক্ষতা বিকাশে বিভিন্ন দলগত কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঠিক ব্যবহার: বর্তমান যুগে প্রযুক্তির ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রশিক্ষণে কিভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে সমাজ উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করা যায়, সে বিষয়ে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়। পাশাপাশি, ফেক নিউজ প্রতিরোধ ও সাইবার নিরাপত্তা নিয়েও শিক্ষাদান করা হয়। প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী যুব ফোরামের সদস্যরা অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত। তারা বলেন, “এই প্রশিক্ষণ আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে সহায়তা করেছে। সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে আমরা এখন অনেক বেশি সচেতন এবং দায়িত্বশীল। বিশেষ করে অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠনে আমাদের ভূমিকা কেমন হতে পারে, তা আমরা গভীরভাবে বুঝতে পেরেছি।” রাঙ্গাবালীর প্রশিক্ষণার্থী এইচ এম সাইমুন সিকদার বলেন, এই প্রশিক্ষণ থেকে আমরা জেনেছি কীভাবে সংবেদনশীলতা ও সহনশীলতা বজায় রেখে সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে পারি। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঠিক ব্যবহার ও নেতৃত্বের গুণাবলী সম্পর্কে আমরা নতুন কিছু শিখেছি, যা আমাদের ভবিষ্যতে কাজে আসবে। রাঙ্গাবালীর যুব ফোরাম এর আহ্বায়ক মোঃ রাকিব বলেন, আমরা অনেক সময় ভাবতাম যে, সমাজ উন্নয়নে আমাদের ভূমিকা ক্ষুদ্র হতে পারে। কিন্তু এই প্রশিক্ষণ আমাদের শিখিয়েছে, ছোট ছোট উদ্যোগই বড় পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে।” এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যুব ফোরামের সদস্যরা তাদের সামাজিক দায়িত্ব সম্পর্কে আরও সচেতন হয়ে উঠেছেন। তারা ভবিষ্যতে সমাজের বিভিন্ন স্তরে নেতৃত্ব প্রদানের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

দৈনিক আলোর প্রতিদিন এর প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না