রাজগঞ্জে একই দিনে দুটি অপমৃত্যু, মরাদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ

২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ৮:৪৪:৪১

উত্তম চক্রবর্তী,মণিরামপুর অফিস।।যশোরের মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ এলাকায় দুটি অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। মরাদেহ দুটি পুলিশ উদ্ধার করেছে। নিহতরা হলেন- রাজগঞ্জ এলাকার গালদা মানিকতলা গ্রামের মাইক্রোবাস চালক ইয়াসিন আরাফাত (৩৫) এবং মশ্বিমনগর ইউনিয়নের নোয়ালি গ্রামের আখিরুল ইসলামের স্ত্রী মলি খাতুন (৩৫)। শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর-২০২২) দুপুরে নিজ বাড়ি থেকে পুলিশ ইয়াসিন আরাফাতের মৃতদেহ উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে এবং গৃহবধু মলি খাতুনের মরাদেহ একই দিন সকালে উদ্ধার করার পর স্বজনদের অনুরোধে দাফনের অনুমতি দিয়েছে পুলিশ। সূত্রে জানা গেছে- নিহত ইয়াসিন আরাফাতের গলায় ও পিঠে ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। স্থানীয়দের ধারণা ইয়াসিন আরাফাতকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে নিহতের স্বজন ও পুলিশের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ইয়াসিন আরাফাতের বাবার নাম মতলেব সরদার। তার আদি নিবাস সাতক্ষীরায়। ১৭ বছর ধরে তিনি মণিরামপুরের গালদা মানিকতলায় স্ত্রী ও এক শিশু ছেলেকে নিয়ে নিজ বাড়িতে থাকতেন। সেখান থেকে পুলিশ তার মরাদেহ উদ্ধার করেছে। এ এলাকায় ভাড়ায় মাইক্রোবাস চালাতেন তিনি।ইয়াসিনের স্ত্রী জোসনা খাতুন বলেন- আমার নানার অসুস্থতার কথা শুনে ছেলেকে নিয়ে বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর-২০২২) বিকেলে পাশের দিঘীরপাড় গ্রামে নানা বাড়িতে যাই। রাতে আমার স্বামী বাড়িতে একা ছিলেন।

বৃহস্পতিবার দিবাগত ভোর রাতে নানার মৃত্যু হলে স্বামীকে বহুবার মোবাইলে কল করে পাইনি। পরে শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে বাড়ি এসে দেখি নলকূপের পাড়ে আমার স্বামীর উলঙ্গ মরাদেহ পড়ে আছে। তবে স্বামীর মৃত্যুর ব্যাপারে কোন মন্তব্য করেননি জোসনা খাতুন। স্থানীয়রা জানান- রাত সাড়ে ৮টার দিকে মাইক্রোবাস নিয়ে বাড়ি আসেন ইয়াসিন। তার বাড়ি প্রাচীর ঘেরা। ভিতর দিয়ে বাড়ির মূল ফটকে তালা দেওয়া ছিল। সকালে ইয়াসিনের স্ত্রী এসে গেট খুলে কলপাড়ে স্বামীকে পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার দেন। তখন সবাই এগিয়ে আসেন। ইয়াসিনের গলায় দাগ রয়েছে। পিঠের একপাশে ক্ষত স্থানে রক্ত লেগে আছে। ধারণা করা হচ্ছে রাতে কেউ বাড়িতে ঢুকে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছেন। খেদাপাড়া ক্যাম্পের ইনচার্জ উপ পরিদর্শক (এসআই) সমেন বিশ্বাস বলেন- রাতে ইয়াসিনের স্ত্রী বাড়িতে ছিলো না। লাশের গলায় ও পিঠে দাগ রয়েছে। মরাদেহের পাশে একটি ইনজেকশনের সিরিঞ্জ পাওয়া গেছে। দেহে সুচ ফুটানোর স্থান পাওয়া যায়নি। এটা হত্যা না আত্মহত্যা কিছু বোঝা যাচ্ছে না। মণিরামপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গাজী মাহবুবুর রহমান বলেন- প্রাথমিকভাবে এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা হবে। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তেন জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এদিকে- রাজগঞ্জ এলাকার কপোতাক্ষ নদে ডুবে মলি খাতুন (৩৫) নামের তিন সন্তানের জননীর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সকালে স্বজনরা ওই নারীর লাশ নদের পানিতে ভাসতে দেখেন। এরআগে বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর-২০২২) সন্ধ্যায় নদে হাঁস খুঁজতে গিয়ে নিখোঁজ হন তিনি। মলি খাতুন মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জের মশ্মিমনগর ইউনিয়নের নোয়ালী গ্রামের আখিরুল ইসলামের স্ত্রী। মশ্মিমনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আজব আলী বলেন- কপোতাক্ষ পাড়ে বাড়ি হওয়ায় আমাদের অঞ্চলের নারীরা হাঁস পালন করেন। মলি খাতুনের ৩-৪টি হাঁস কদিন ধরে নিখোঁজ ছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নদের ওপারে হাঁস দেখতে পেয়ে পানি সাঁতরে হাঁস আনতে যান মলি খাতুন। পরে আর বাড়ি না ফেরায় রাতভর নদে তার সন্ধান চলে। রাতে খবর পেয়ে রাজগঞ্জ ক্যাম্প থেকে পুলিশ আসে। কিন্তু ওই নারীকে পাওয়া যায়নি। মেম্বর আজব আলী বলেন- শুক্রবার )০২ সেপ্টেম্বর-২০২২) সকালে বাড়ির অদূরে গৃহবধূর লাশ ভাসতে দেখে পুলিশে খবর দেন স্বজনরা। কপোতাক্ষ নদে শেওলায় ভরা। ধারণা করা হচ্ছে- সাঁতরে যাওয়ার সময় শেওলায় আটকে ডুবে মলি খাতুনের মৃত্যু হয়েছে। রাজগঞ্জ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক ইনসপেক্টর বানী ইসরাইল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন- কোন অভিযোগ না থাকায় স্বজনদের অনুরোধে গৃহবধূর লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

দৈনিক আলোর প্রতিদিন’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।