কুড়িগ্রামের বালারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদানে রয়েছে নানাবিধ সমস্যা!
কুড়িগ্রামের সীমান্তঘেষা ফুলবাড়ী উপজেলাধীন নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের ৫৫ নং বালারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি (বিদ্যালয় কোডঃ- ১০৭০৫০১৫৫) ১৯৮০ সালে স্থাপিত হয়ে অনেক চড়াই-উৎরাই পেড়িয়ে অদ্যাবদি পাঠদান করে আসছে । বিদ্যালয়টি ২০১২ ইং সালে জাতীয়করনের আওতাভুক্ত হয়।
বর্তমানে উক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ২ শতাধিক ছাত্র/ছাত্রী, ও ৫ জন সহকারি শিক্ষক নিয়ে অতি কষ্টে দীর্ঘদিন ধরে পাঠদান করে আসছেন । ২ শতাধিক ছাত্র/ছাত্রীর জন্য ছোট আকারের মাত্র তিনটি শ্রেণী কক্ষ এবং ৬ জন শিক্ষকের জন্য একটি সংকীর্ণ অফিস কক্ষ, প্রধান শিক্ষকের নেই কোন আলাদা বসার জায়গা ।
সরেজমিনে পরিদর্শন করে জানা যায়, স্কুলটি ২ শিফটে চালানো হয়। ১ম শিফটে প্রাক, ১ম ও ২য় শ্রেণীর প্রায় শতাধিক ছাত্র/ছাত্রীর পাঠদান কোনমতেও চললেও, ২য় শিফটে ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণীর প্রায় দেড় শতাধিক ছাত্র/ছাত্রীদের নিয়ে বিপাকে থাকতে হয় বিদ্যালয়টিকে ।এত সংখ্যক ছাত্র/ছাত্রীর জন্য মাত্র সংকীর্ণ তিনটি পাঠদান শ্রেণীকক্ষ ।একটি বেঞ্চে ৩/৪ জন করে বসতে হয় ।নেই প্রাক-এর কোন স্বতন্ত্র শ্রেণী কক্ষ । এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ঠিকমত ক্লাসে মনোয়োগ দিতে পারছে না । তারা অনেক কষ্ট করে ক্লাসে লিখতে গিয়ে পড়ে ভীষণ বিপাকে । ব্যাগ ও টিফিন ক্যারি নিচে পড়ে গিয়ে বই, খাতাপত্র ও খাবার নষ্ট হয়ে যায় ।জনাকীর্ণতায় গরমে অতিষ্ট হয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে যায় ।শ্রেণীকক্ষে পারে না তারা ঠিকমত চলাফেরা করতে ।প্রয়োজনের তুলনায় শ্রেণীকক্ষে বেশি শিক্ষার্থী অবস্থান করায় থেকে থেকে সৃষ্টি হয় বিকট শব্দের । যা উত্তম পাঠদানের পরিপন্থি । কোমলমতি শিশুরা এসব সমস্যার কথা তাদের অভিভাবদের জানালে অভিভাবকগণ শিশুদের বিদ্যালয় পাঠাতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে থাকেন ।দূরে হলেও অনেকে আবার তাদের ছেলেমেয়েদের অন্যকোন বিদ্যালয়ে বদলি করে নিয়ে যান । ছাত্র/ছাত্রীরা শ্রেণীকক্ষের স্বল্পতা, শ্রেণীকক্ষে জনাকীর্ণতা, পাঠদানে অসুবিধা এসব কারণে বিদ্যালয় বিমুখ হচ্ছে । অনেকে শিশু শিক্ষার্থী আবার ঝড়ে পরছে । এতে শিশুদের লেখাপড়ার স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হয়ে আসছে ।
সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হলো শিক্ষকগণের জন্য ছোট্ট একটি অফিস রুম । যেখানে অফিসের আলমারী, ডকুমেন্ট ও আসবাবপত্র দিয়ে পরিপূর্ণ। প্রধান শিক্ষকের নেই কোন আলাদা বসার জায়গা । ৬ জন শিক্ষক একসাথে একই সময় অফিস কক্ষে অসস্থান করতে পারেন না কক্ষের সংকীর্ণতা ও স্বল্প আসন থাকার কারণে । কোনমতে চারজন বসলে ২ জনকে অফিসের বাহিরে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। বসতে গেলেও একজনের গায়ের সাথে আরেক জনের গা লেগে যায় । উক্ত স্কুলে চারজন মহিলা শিক্ষক সকলেরই বাচ্চা ছোট এবং তাদের একজনের বাচ্চা মায়ের বুকের দুধ সঠিক সময়ে পান করতে পারে না এরুপ অব্যস্থার কারণে ।মহিলা শিক্ষকগন গোপনীয়তা রক্ষা করে চলাফেরা করতে পারেন না।কোন গেস্ট আসলে প্রধান শিক্ষক পড়ে যান মহাবিপদে । তিনি বাধ্য হয়ে সহকারি শিক্ষকগণকে অফিসের বাইরে অবস্থান করতে বলেন । যা অত্যন্ত কষ্টের ও বেদনাদায়ক ।
উপরোক্ত সমস্যা থেকে সৃষ্ট প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক মোঃ জনাব দেলোয়ার হোসেন বলেন, উপযুক্ত ভবন না থাকার দরুণ এসব সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে । নতুন ভবন এর জন্য ২০১৯ ইং সাল থেকে আবেদন করে আসছি। আমার চেয়ে জুনিয়র স্কুলগুলো নতুন ভবন পেয়েছে কিন্তু আমার কপাল খারাপ। আমি এ ব্যাপারে দৌড়াদৌড়ি করে হয়রান হয়ে গেছি।”
ফুলবাড়ী উপজেলা সহকারি শিক্ষা অফিসার ও উক্ত ক্লাস্টার প্রধান জনাব মোঃ আশরাফুজ্জামান বলেন, আমি উক্ত বিদ্যালয়ের সমস্যার কথা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি । তারা ব্যবস্থা নিবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন ।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার জনাব আকবর কবীর বলেন, আমি নতুন এসেছি । আপনার মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারলাম । তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবো ।
এ ব্যাপারে ফুলবাড়ী এলজিইডি অফিসে গেলে প্রধান প্রকৌশলী ভারতে গেছেন এবং দায়িত্বে যিনি আছেন উনিও ছুটিতে ছিলেন বলে বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি ।
দৈনিক আলোর প্রতিদিন এর প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
পাঠকের মন্তব্য: