রাঙ্গাবালীতে এক যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু৷
নিজস্ব প্রতিনিধি
রাঙ্গাবালী-পটুয়াখালী।
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার দক্ষিণ চরমোন্তাজের হিন্দুপাড়া এলাকায় লিমন মন্ডল ওরফে রতন (৩৭) নামক এক যুবকের রহস্যজনক মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিজ শ্বশুড়ালয়ে অবস্থানরত ওই যুবক শুক্রবার (২১শে জুলাই) শেষ রাতের কোন এক সময়ে ঘরের আড়ার সাথে গলায় গামছা বেধে আত্মহত্যা করেছে বলে দাবী পরিবারের সদস্যদের। পরে খবর পেয়ে স্থানীয় ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে ঘরের মেঝে থেকে লাশটি উদ্ধার করে মর্গে নিয়ে যায়।
একমাত্র কন্যা সন্তান অতুসি (০৪) ও স্ত্রীকে রেখে লিমন হঠাৎ কেন আত্মহননের পথ বেছে নিল তার উওর জানতে চাইলে তার শ্বশুড় জাদব সমাজপতি বলেন, প্রায় ৭ বছর আগে লিমন ও তৃপ্তি রাণীর পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়। ঔষধ কোম্পানীর চাকরীর ছেড়ে বরিশাল থেকে সম্প্রতি ফার্মেসী ব্যাবসা করার উদ্দেশ্যে চরমোন্তাজে এসে তার বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন। আজ (শুক্রবার) তার নতুন ফার্মেসীর জন্য ঔষধ কিনতে বরিশাল যাবার কথা ছিল। অথচ শেষ রাতে মেয়ের চিৎকারে ঘুম থেকে উঠে দেখেন লিমন গলায় গামছা পেচানো অবস্থায় আড়ার সাথে ঝুলছেন। পরে পাশের বাড়ির আরও দুজনকে ডেকে নিয়ে বেঁচে আছে ভেবে লিমনকে নামিয়ে ফেলেন। তিনি আরো বলেন, পিতামাতা হারা লিমনকে নিজ সন্তানের চোখেই দেখত তার পরিবার, এছাড়া তৃপ্তির সাথেও কোন পারিবারিক দ্বন্দ বা কলহ ছিল না তিনি দাবী করেন।
ঘটনা সম্পর্কে লিমনের স্ত্রী তৃপ্তি রাণী কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, কয়েকদিন ধরেই প্রচন্ড রকমের দাতের ব্যাথ্যায় ভুগছিলেন লিমন। “মরন ছাড়া এই ব্যাথ্যা ভাল হবে না” এমন মন্তব্য করলে লিমনকে ভাল ডাক্তার দেখানোর পরামর্শও দিয়েছে সবাই। গতকালও রাতের খাবার খাওয়ার পর দাত ব্যাথায় গরম জল ও লবনে অনেকক্ষন কুলকুচি করেছেন। শেষ রাতে ঘুম ভেঙ্গে লিমনকে বিছানায় না দেখে খোঁজ করলে তাকে ঘরের আড়ার সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পাই। এক পর্যায়ে আহাজারি করে তৃপ্তি আরো বলেন, নিজেদের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি করার জন্য বরিশাল ছেড়ে এই চরে এসেছিলেন, অথচ আজ সব ছেড়ে চলে গেছেন। তাদের মাঝে সাংসারিক বা ব্যাক্তিগত কোন বিষয়ে ঝামেলা নেই বলে দাবী করেন তৃপ্তি।
তবে লিমনের মৃত্যুর কারন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারই আপন ছোটভাই মিঠুন মন্ডল (৩০) ও মামাতো ভাই রিপন বিশ্বাস (৩৭)। তারা বলেন, বিয়ের কিছুদিন পরেই লিমন জানতে পারেন যে স্ত্রী তৃপ্তির সাথে পার্শ্ববর্তী বাড়ীর এক যুবকের সাথে বিয়ের পূর্ব থেকে প্রেমের সম্পর্ক ছিল এবং এ নিয়ে দুজনের মাঝে প্রায়শই ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকত। একপর্যায়ে তৃপ্তি এমনটি আর ভবিষ্যতে না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমা চাইলে লিমন মেনে নেয়। কিন্তু হঠাৎ করেই সপ্তাহ খানেক আগে ফের ওই যুবকেরর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করেছে বলে লিমন জানতে পারলে এ নিয়ে পুনরায় বিবাদ সৃষ্টি হয়। রিপন বলেন, একমাত্র ৪ বছরের কন্য সন্তানের প্রতি অগাধ ভালবাসা থাকার কারনে লিমন তৃপ্তিকে ডিভোর্সও দিতে পারছিল না। তিনি আরো বলেন, ‘যেই মানুষটি সন্তানের টানে ভারতে পর্যন্ত যায়নি সে কিভাবে সুইসাইড করে? এটা আত্মহত্যা নয় বরং তৃপ্তি ও তার প্রেমিক পরিকল্পিত ভাবে লিমনকে হত্যা করেছে’।
লিমনের সুরতহাল কারী পুলিশ কর্মকর্তা এএসাই রাতুল বলেন, প্রাথমিক সুরতহাল শেষে লাশ ময়না তদন্তের জন্য পটুয়াখালীর মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে রাঙ্গাবালী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে৷
দৈনিক আলোর প্রতিদিন এর প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
পাঠকের মন্তব্য: