প্রার্থীর সঙ্গে ইউএনওর সখ্যতায় অস্বস্তিতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা, ভোট বর্জনের ঘোষণা।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ইউপি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ নিয়ে ইউএনও’র নাটকীয়তা
পটুয়াখালীঃ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিতে রাঙ্গাবালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুঃ সাইদুজ্জামান মামুনের পদত্যাগ নিয়ে তৈরি হয়েছে তুমুল ধোঁয়াশা। আজ থেকে নয়দিন পূর্বে ইউপি চেয়ারম্যান পদত্যাগ করলেও আইন অনুযায়ী স্থানীয় জনসাধারণ ও বর্তমান পরিষদসহ কাউকেই অবহিত না করে তথ্য গোপন করেছেন রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান।
নানান নাটকীয়তার পরে শুক্রবার (১০ মে) সকাল ১০টায় গত ২ মে চেয়ারম্যানের পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইউএনও মিজানুর রহমান।
তবে আইন অনুযায়ী পরবর্তী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করেই ইউএনও বিষয়টি গোপন করায় তীব্র সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে গভীর সখ্যতা থাকায় তার পদত্যাগ নিয়ে তথ্য গোপন, গণমাধ্যমে একেক সময় ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য প্রদান করে ভুল তথ্য দিয়ে হয়রানী করেন তিনি।
এদিকে এই ইউএনও দায়িত্বে থাকা অবস্থায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণে নিরেপক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। তার পক্ষপাতিত্ব আচরণ নির্বাচন কে প্রশ্নবৃদ্ধ করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তারা। নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্টদের এবিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানান সাম্ভাব্য প্রার্থীরা।
দেশে প্রচলিত আইন ও বিধি অনুযায়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের স্ব-পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে।
কিন্তু রাঙ্গাবালী ইউপি চেয়ারম্যান পদত্যাগ না করেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন এমন গুঞ্জনে গতকাল রাতে রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
আইনে বাধ্য বাধকতা থাকলেও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যানসহ কাউকেই শুক্রবার (১০ মে) সকাল এগারোটা ১৫ মিনিট পর্যন্ত চেয়ারম্যানের পদত্যাগের বিষয় টি অবহিত করেনি ইউএনও। তিনি দীর্ঘদিন আট দিন বিষয়টিকে অসৎ উদ্দেশ্য গোপন করেছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ মে) ৪র্থ ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন। এর দুইদিন আগেই অনলাইনে মনোনয়ন দাখিল করেছেন রাঙ্গাবালী ইউপি চেয়ারম্যান মুঃ সাইদুজ্জামান মামুন।
এবিষয়ে গতকাল রাত নয়টা ৩৪ মিনিটে রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমানের সঙ্গে একাধিক বার যোগাযোগ করা হয়েছে। তিনবারই তিনি নানান নাটকীয়তার আশ্রয় নিয়ে তিন ধরনের তথ্য দিয়েছে।
প্রথমবার তাকে প্রশ করা হয়েছে, রাঙ্গাবালী ইউপি চেয়ারম্যান মুঃ সাইদুজ্জামান মামুন আপনার কাছে তার পদত্যাগ জমা দিয়েছে কিনা? উত্তরে তিনি বলেছেন, পদ শূন্য হওয়া লাগবে কিনা, এবিষয়ে হাইকোর্টের একটা রায় আছে, এবিষয়ে আপনি জানেন কিনা?
তিনি আরও বলেন পদ তো শূন্য হওয়া লাগবে না, আপনি জেলা নির্বাচন অফিসারকে কল দিয়ে এবিষয়ে আরও ভালো জানতে পারবেন।
তবে আমরা রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে কর্মচারীদের সঙ্গে দফায় দফায় যোগাযোগ করেছি। সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলছে, বৃহস্পতিবার বিকেল চারটা পর্যন্ত কোন জনপ্রতিনিধি পদত্যাগ পত্র জমা দেননি এবং এই কার্যালয় হতে উর্ধতন কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়নি।
জানা যায়,বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সচিব মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আইন মোতাবেক পদত্যাগ করতে হবে।
এরমধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টায় রাঙ্গাবালী ইউপি চেয়ারম্যান মুঃ সাইদুজ্জামান মামুনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি বলেন, এটা নিয়ে আপনাদের এত আগ্রহ কেন। আমার পদত্যাগ লাগবে কিনা, করছি কিনা, কাগজ জমা দিয়েছি কিনা,তা জানে কমিশন। তাদের জিজ্ঞেস করেন।
পরবর্তীতে আবারও রাত দশটা ৫১ মিনিটে রাঙ্গাবালী ইউএনও’র সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তখন তিনি বলেন, জ্বি চেয়ারম্যান পদত্যাগ করেছে। আমার সরি, আগে বলতে পারিনি।
এছাড়াও সকাল দশটায় যোগাযোগ করে পদত্যাগপত্রের কপি ও ফরওয়ার্ডিং কপি চাইলে তিনি দিতে অস্বীকৃতি জানান এবং ডিসি অফিস থেকে নিতে বলেন।
অথচ স্থানীয় সরকার ইউনিয়ন পরিষদ আইনের ৩২ নং ধারায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, (২) চেয়ারম্যান এতদুদ্দেশ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট, তাঁহার পদত্যাগ করিবার অভিপ্রায় লিখিতভাবে ব্যক্ত করিয়া পদত্যাগ করিতে পারিবেন এবং উক্ত পদত্যাগ পত্র গৃহীত হওয়ার সাথে সাথে উক্ত চেয়ারম্যানের পদ শুন্য হইবে।
(৩) উপ-ধারা (১) ও (২) এর অধীন পদত্যাগের বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনধিক ৭ (সাত) দিনের মধ্যে পরিষদ, নির্বাচন কমিশন এবং সরকারকে অবহিত করিবেন।
তবে ইউএনও পরিষদ সহ কাউকেই যথাযথ সময়ে অবহিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ আইনের ব্যপ্তয় ও তথ্য গোপন করেছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
আজ শুক্রবার সকাল এগারোটায় রাঙ্গাবালী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান গাজী বলেন, চেয়ারম্যানের পদত্যাগের বিষয় আমরা কেউ জানিনা। তিনি পদত্যাগ করেছেন, এমন সংবাদ আমাদের কেউ দেয়নি বা আমাকে আনুষ্ঠানিক ভাবে চিঠি দিয়ে দায়িত্ব প্রদান করেনি।
মনোনয়ন দাখিল কারী সাম্ভাব্য প্রার্থী আরিফ বিন ইসলাম বলেন, এই ইউএনও মামুনকে নিয়ে একটা দুষ্ট চক্র তৈরি করেছে। ওনি দায়িত্বে থাকলে আমি সম্পূর্ণ নির্বাচন বর্জন করবো। কারণ, ওনি থাকলে আমি, ভোটার ও ভোট কোনটাই নিরাপদ না।
বর্তমান চেয়ারম্যান ও সাম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ডাঃ জহির উদ্দিন বলেন, একজন প্রার্থীর সঙ্গে এরকম নির্বাচন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বক্তির সখ্যতায় একটায় বিরাট ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ইউএনও’র এমন আচরণে আমরা অন্য সকল প্রার্থীরা অস্বস্তিতে ভোগছি।
আজ শুক্রবার সকাল দশটায় স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক জুয়েল রানা চিঠি পাওয়ার কথা জানালেও, তার দপ্তরের কর্মচারীরা বিগত সপ্তাহে কোন চিঠি পায়নি।
জেলা প্রশাসক নূর কুতুবুল আলম বলেন, ইউএনও চাইলেই কি পদ শূন্য ঘোষণা করতে পারে, একটা সিস্টেম আছে না। আবেদন আমাদের আসবে, আমরা স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠাবো তারপর শূন্য হবে। আমি এখনও দেখিনি, আপনি রোববার কল দিয়েন, খোঁজ নিয়ে জানাবো।
সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার খান আবি শাহানুর খান বলেন, চিঠি আসছে কি না জানিনা, খোঁজ নিতে পারিনি। গতকাল আসতেও পারে। তাহলে রোববার একটু যোগাযোগ করেন, ঐদিন বলতে পারবো।
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন অফিসার মিজানুর রহমান বলেন, সবাই তো অনলাইনে মনোনয়ন দাখিল করেছে। কে কে ডকুমেন্টস দিয়েছে, তা যাচাই বাছাইয়ের দিন বলা যাবে। আগে তো বলা সম্ভব নয়।
রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে সংশ্লিষ্টকাজের দায়িত্ব নিয়োজিতরা বলেছেন, গতকাল পর্যন্ত রাঙ্গাবালীর কেউ পদত্যাগ করোনি এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলের দায়িত্ব প্রাপ্তরা বলেন, গতকাল পর্যন্ত বাউফল ছাড়া আর কোন উপজেলায় কোন জনপ্রতিনিধি পদত্যাগের বিষয় আমাদের কাছে আসেনি
###
দৈনিক আলোর প্রতিদিন এর প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
পাঠকের মন্তব্য: