সুজন মাহমুদ

নিজস্ব প্রতিনিধি

বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞায় নতুন সময়—ভারতের সঙ্গে মিলিয়ে ৫৮ দিনে নামল সীমা

৯ এপ্রিল ২০২৫, ৩:০৬:২৪

মো: সুজন মাহমুদ , রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা ৬৫ দিন থেকে কমিয়ে ৫৮ দিন নির্ধারণ করেছে সরকার। এবার প্রথমবারের মতো প্রতিবেশী ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞার সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উপকূলীয় লাখো জেলের দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়িত হলো, একই সঙ্গে রক্ষা পাবে দেশের সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদও।

 

এতদিন বাংলাদেশে প্রতিবছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকত। অন্যদিকে, ভারতের জলসীমায় ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত ৬১ দিনের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকায় দুই দেশের মধ্যে সময়ের পার্থক্য ছিল।

 

এ কারণে যখন বাংলাদেশের জেলেরা মাছ ধরায় বিরত থাকতেন, তখন ভারতীয় ট্রলারগুলো বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে নির্বিচারে মাছ ধরত বলে অভিযোগ ছিল স্থানীয় জেলেদের। এতে একদিকে দেশের জেলেরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতেন, অন্যদিকে হুমকির মুখে পড়ত মৎস্যসম্পদ।

 

 

সরকার চলতি বছরের ১৬ মার্চ নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করে জানায়, এখন থেকে প্রতিবছর ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিন সামুদ্রিক মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকবে। এই সময়সীমা ভারতের সঙ্গে প্রায় মিল রেখে নির্ধারণ করা হয়েছে।

 

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন সময়সীমা মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ, টেকসই আহরণ এবং জেলেদের স্বার্থরক্ষা—সবকিছুর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

 

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার জেলে হারুন মাঝি বলেন, “আগে আমরা নিষেধাজ্ঞার সময় কিছুই করতে পারতাম না, অথচ ভারতীয় ট্রলারগুলো দিব্যি মাছ ধরে নিয়ে যেত। এবার দুই দেশের নিষেধাজ্ঞা একসাথে হওয়ায় প্রতিযোগিতাও কমবে, ক্ষতিও হবে না।

 

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, “দুই দেশের সময় এক হলে মাছের বংশবৃদ্ধি, প্রজনন ও সংরক্ষণ আরও কার্যকর হবে। এখন আর আমরা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে অন্যকে সুযোগ করে দিচ্ছি না। এটা দেশের জন্য বড় অর্জন।

 

তিনি আরও বলেন, “নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে নজরদারি জোরদার করতে হবে। কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর তৎপরতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি, জেলেদের জন্য বিকল্প আয়ের উৎস, খাদ্য ও নগদ সহায়তা নিশ্চিত করা জরুরি।

 

নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা কমিয়ে ভারতীয় সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে আনা শুধু একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়, এটি দেশের মৎস্যনীতি ও উপকূল ব্যবস্থাপনার পরিণত দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিচয়। এর ফলে যেমন মাছের উৎপাদন টেকসই হবে, তেমনি উপকূলীয় অঞ্চলের জেলে পরিবারগুলোর অর্থনৈতিক নিরাপত্তা আরও নিশ্চিত হবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল

দৈনিক আলোর প্রতিদিন এর প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না

পাঠকের মন্তব্য: