সিনিয়র সহকারী জজ আদালত অপসারণের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রাঙ্গাবালীবাসীর প্রতিবাদ।
মোঃ সুজন মাহমুদ
রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় সিনিয়র সহকারী জজ আদালত ষড়যন্ত্রমূলকভাবে অপসারণের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে স্থানীয় জনসাধারণ। এই পরিস্থিতিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বুধবার সকাল ১১টায় উপজেলা প্রশাসন ভবনের সামনে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের অন্তত দুই হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষ, যাদের মূল দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল রাঙ্গাবালীতে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত স্থাপন।
রাঙ্গাবালী উপজেলা ২০১২ সালে প্রশাসনিক ইউনিট হিসেবে গঠিত হয়। প্রশাসনিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকা জেলা শহর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। সড়কপথের সরাসরি সংযোগ না থাকায় এখানকার জনগণ নদী পারাপার করে পার্শ্ববর্তী উপজেলা গলাচিপায় যাতায়াত করতে বাধ্য হয়। এই যাতায়াতের কারণে বর্ষাকালে জনসাধারণের বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। জমিজমা ও ক্রিমিনাল মামলা সংক্রান্ত কাজে পার্শ্ববর্তী উপজেলায় যেতে জনগণকে জীবনহানির ঝুঁকি নিয়ে নদী পাড়ি দিতে হয়।
রাঙ্গাবালীতে ২০২৪ সালে সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের কার্যক্রম শুরু হলেও এখানকার মানুষ এখনো জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অভাবে নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। জেলা শহরের দূরত্ব এবং সড়ক যোগাযোগের অভাবে এখানকার জনগণ দ্রুত বিচারিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে তাদের মধ্যে বিচারিক ব্যবস্থা উন্নয়নের দাবি দীর্ঘদিনের।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, রাঙ্গাবালীতে সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই জনগণ একটি সুসংগঠিত বিচারিক ব্যবস্থার জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু কিছু ষড়যন্ত্রমূলক প্রচেষ্টার কারণে এই আদালত অপসারণের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বক্তারা এই অপসারণের চেষ্টাকে ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, রাঙ্গাবালীর মানুষ আর বিচারহীনতায় ভুগতে চায় না।
মানববন্ধনে উপস্থিত বক্তারা আরও বলেন, রাঙ্গাবালীর মানুষ দীর্ঘদিন ধরে একটি কার্যকর বিচারিক ব্যবস্থা চাইছে। তারা বারবার প্রশাসনকে জানালেও, তাদের দাবিগুলো উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। বক্তাদের মতে, রাঙ্গাবালীর মানুষকে যেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পাড়ি দিয়ে অন্য উপজেলায় যেতে না হয়, তার জন্য স্থানীয়ভাবে একটি পূর্ণাঙ্গ আদালত প্রতিষ্ঠা করা একান্ত জরুরি।
বক্তাদের অভিযোগ, এই আদালত চালু হওয়ার পরেও কার্যক্রমে পূর্ণতা আসেনি। জেলা শহর থেকে দূরে থাকার কারণে এবং সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় মানুষ নানান সমস্যায় পড়ছে। রাঙ্গাবালীতে একটি স্থায়ী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত স্থাপন করা না হলে এখানকার জনগণ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত থাকবে। বক্তারা বলেন, বিচারিক সেবা হলো জনগণের মৌলিক অধিকার। এ ধরনের কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে ষড়যন্ত্রমূলক। তারা এ বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন এবং দ্রুত সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।
রাঙ্গাবালী উপজেলায় আদালত স্থাপন অত্যন্ত জরুরি। সড়কপথের যোগাযোগের অভাব এবং নৌপথের ঝুঁকি বিবেচনায় রাঙ্গাবালীর মানুষের জন্য দ্রুত বিচারিক কার্যক্রমের সেবা নিশ্চিত করা অত্যন্ত প্রয়োজন। একটি স্থায়ী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত স্থাপিত হলে স্থানীয় জনগণ ন্যায়বিচার পেতে সুবিধা পাবে এবং তাদের ভোগান্তি অনেকাংশে কমে যাবে।
রাঙ্গাবালীতে আদালত স্থাপনের দাবিতে স্থানীয় জনগণের এই প্রতিবাদ ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই মানববন্ধনের মাধ্যমে রাঙ্গাবালীর জনগণ তাদের ন্যায়বিচারের জন্য দীর্ঘদিনের দাবির পুনরাবৃত্তি করেছে। তাদের দাবি শুধু স্থানীয় বিচারিক সেবার উন্নয়নই নয়, বরং একটি কার্যকর বিচারিক ব্যবস্থার মাধ্যমে এলাকার সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমানো। এতে স্থানীয় জনগণ প্রশাসন ও সরকারের কাছ থেকে দ্রুত সমাধানের আশায় রয়েছে।
রাঙ্গাবালীর জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি হচ্ছে একটি কার্যকর বিচার ব্যবস্থা। যদিও এখানে সিনিয়র সহকারী জজ আদালত স্থাপন হয়েছে, তবে একটি পূর্ণাঙ্গ বিচারিক ব্যবস্থা ছাড়া জনগণের বিচার সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। স্থানীয় জনগণ মনে করে, একটি স্থায়ী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত স্থাপন করা হলে তারা আরও ন্যায়বিচার পাবে এবং বিচারিক কার্যক্রম সহজ হবে।
সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত দ্রুত স্থাপনের দাবী জানিয়ে মানববন্ধন শেষে আইন ও বিচার বিভাগীয় উপদেষ্টা বরাবর ৭টি দাবী তুলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
দৈনিক আলোর প্রতিদিন এর প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
পাঠকের মন্তব্য: