রাঙ্গাবালীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আনসার ও ভিডিপির তৎপরতা৷
নিজস্ব প্রতিনিধি
রাঙ্গাবালী পটুয়াখালী৷
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলা একটি নদীবেষ্টিত এলাকা। এখানে যেমন প্রকৃতির বৈচিত্র্য রয়েছে, তেমনি আছে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্থানীয় জনগণকে সহায়তা ও নিরাপত্তা দিতে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী (ভিডিপি) দীর্ঘদিন ধরেগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশেষ করে নির্বাচন, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, এবং সামাজিক সমস্যা বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে আনসার ও ভিডিপির কার্যক্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
রাঙ্গাবালীতে আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের সেবার মান, ত্যাগ, এবং দায়িত্বশীলতার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি একটি আধা-সামরিক বাহিনী হিসেবে দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছে। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বাহিনী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সামাজিক সেবা ও নিরাপত্তা প্রদান করে থাকে। রাঙ্গাবালীতে আনসার ও ভিডিপির সদস্যরা বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত এবং তারা সমাজের বিভিন্ন প্রয়োজন মেটাতে সহায়তা করেন।
রাঙ্গাবালী একটি নদীবেষ্টিত, প্রত্যন্ত এলাকা হওয়ায় এখানে সহজে সড়কপথে যাতায়াত করা সম্ভব নয়। ফলে বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা বা ঝড়ের সময়ে এই অঞ্চলের মানুষজনের দুর্ভোগ অনেক বেড়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে আনসার ও ভিডিপির সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তারা বন্যা পরিস্থিতিতে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা, সাধারণ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া এবং তাদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কাজ করে থাকেন।
রাঙ্গাবালীর আনসার ও ভিডিপির দায়িত্বশীল এবং অভিজ্ঞ উপজেলা কর্মকর্তা মোঃ জাকির হোসেন এই বাহিনীর কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমরা যে কোনো পরিস্থিতিতে দেশের সেবা করতে প্রস্তুত। আমাদের কাজ হলো জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা। পূজা বা নির্বাচন হোক, অথবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, আমরা সবসময়ই সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করি।”
আনসার ও ভিডিপির সদস্যরা নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে যায়, যা তাদের দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতা বাড়িয়ে তোলে। তাদের প্রশিক্ষণ শুধু শারীরিক সক্ষমতার ওপরই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তারা মনস্তাত্ত্বিক এবং মানবিক সেবার ক্ষেত্রেও দক্ষতা অর্জন করে। এ কারণেই তারা দেশের যে কোনো প্রয়োজনে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে সক্ষম হয়। তিনি আরও বলেন, “এখানে জনগণের আস্থা অর্জন করা আমাদের প্রধান লক্ষ্য। জনগণ যাতে শান্তিতে এবং নিরাপদে বসবাস করতে পারে, সে জন্য আমাদের বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। রাঙ্গাবালীতে যে কোনো ধরনের রাজনৈতিক ও সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে আমরা সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকি।”
উপজেলা টিআই মোঃ বিপ্লব হোসেন বলেন, বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাল্য বিবাহ একটি মারাত্মক সামাজিক সমস্যা, বিশেষ করে রাঙ্গাবালীর মতো এলাকায় এটি এখনও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই সমস্যা সমাধানে তিনি ও তার দল নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, “আমরা আমাদের কার্যক্রমের পরিসর বাড়ানোর পরিকল্পনা করছি। সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার জন্য আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব। বিশেষত, বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে আমরা অত্যন্ত সচেতন। এ ব্যাপারে আমরা স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করছি। দেশের যুবসমাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য এ ধরনের উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
মোঃ বিপ্লব হোসেন ও তার বাহিনী বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তারা বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে স্থানীয় জনগণ ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং বাল্য বিবাহের কুফল সম্পর্কে তাদের সচেতন করেন। পাশাপাশি, তারা স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে বাল্য বিবাহের ঘটনা প্রতিরোধে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
ভিডিপি সদস্য মোঃ সুজন মাহমুদ বলেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষের সেবা করা। দুর্যোগ বা সংকটময় সময়ে আমরা স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশে থেকে তাদের সহায়তা করি। এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।”
তিনি আরও বলেন, “প্রতিটি দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে আমরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিই। রাঙ্গাবালীতে বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের মতো দুর্যোগ হলে, আমরা দ্রুততার সাথে কাজ শুরু করি এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে সাহায্য পৌঁছে দিই।””আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করি যাতে আমাদের কাজের মান উন্নত হয়। আমাদের দায়িত্বশীলতা এবং ত্যাগের মানসিকতা সবসময় আমাদের প্রেরণা যোগায়।”
ভিডিপি সদস্য মোঃ সাদিম হোসেন (মিয়াদ) বলেন, “আমরা সবাই একসাথে কাজ করি এবং প্রতিটি কাজের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। আমাদের বাহিনী সব সময় ঐক্যবদ্ধ থাকে এবং তা আমাদের কাজের গুণগত মান বৃদ্ধি করে।”
রাঙ্গাবালীর আনসার ও ভিডিপির সদস্যরা শুধু দুর্যোগকালীন সময়েই নয়, নির্বাচন ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। প্রতিটি নির্বাচনে তারা সতর্ক অবস্থায় থাকে এবং নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে নির্বাচন পরিচালনা করে। এতে ভোটাররা নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।
ধর্মীয় উৎসবগুলোতে, বিশেষত দুর্গাপূজার সময়, তারা মণ্ডপগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা এবং লোকসমাগমের নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নিয়ে তারা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আস্থা বাড়িয়ে তুলেছে।
রাঙ্গাবালীর আনসার ও ভিডিপির সদস্যরা ভবিষ্যতে আরও বৃহৎ পরিসরে কাজ করার পরিকল্পনা করছেন। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে তারা সামাজিক উন্নয়ন এবং বাল্য বিবাহ প্রতিরোধের কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করতে চান। তারা জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ চালিয়ে যাবেন এবং বিভিন্ন সময়ে দেশে যেসব চ্যালেঞ্জ দেখা দিচ্ছে, তার মোকাবেলায় আরও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
রাঙ্গাবালীতে বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপির ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয় এবং স্থানীয় জনগণের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। তারা যে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে নিজেদের দায়িত্ব পালন করে চলেছে, তা সত্যিই অনুকরণীয়। কোম্পানি কমান্ডার মোঃ জাকির হোসেন, উপজেলা টিআই মোঃ বিপ্লব হোসেন, এবং ভিডিপি সদস্যদের সেবার মাধ্যমে রাঙ্গাবালীর জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। তাদের নেতৃত্ব এবং পরিশ্রম সমাজে এক ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সহায়ক হয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচন, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, এবং বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে তাদের সেবা সাধারণ মানুষের জীবনে স্বস্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষা নয়, বরং সমাজে স্থিতিশীলতা এবং শান্তি বজায় রাখতে একটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। তাদের নিরলস প্রচেষ্টা এবং ত্যাগের মানসিকতা ভবিষ্যতেও রাঙ্গাবালীর জন্য আশীর্বাদস্বরূপ হবে।
দৈনিক আলোর প্রতিদিন এর প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
পাঠকের মন্তব্য: