আল্লাহ স্বামী ছেলে দুজনকেই কেরে নিল এ শোক কেমনে সইব
সালেহীন সোয়াদ সাম্মী, মধুখালী (ফরিদপুর) প্রতিনিধিঃ
স্বামী মারা গেছেন যখন তার বয়স ২৫ বছর। আবার ছেলে জুয়েলকেও কেরে নিল ২৫ বছর বয়সে। এখন আমি কি নিয়ে বাচঁবো। আমার নিষ্পাপ ছেলেকে যারা গুলি করে মেরেছে তাদের বিচার আল্লাহর উপর ছেরে দিলাম। রান্না ঘরের দুয়ারে বসে দু’চোখের পানি ফেলে সাংবাদিকদের নিকট এভাবেই স্বামী ছেলের মৃত্যুর কথা বলছিলেন ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার মেগচামী ইউনিয়নের পারআশাপুর গ্রামের মোছাঃ নাজমা বেগম। তিনি বলেন আমার স্বামী (মৃত আকিদুল শেখ) এক ছেলে ও এক মেয়েকে রেখে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিকেলে মারা গেছিলেন।
আমার ছেলে জুয়েল গুলি খেয়ে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি অবস্থায় মারা যেতে হল। এ দৃশ্যও আমাকে দেখতে হল।
বাড়িতে স্বচ্ছলতা ফেরানোর আশায় মোঃ জুয়েল ২ বছর আগে যোগ দেন আনসার বাহিনীতে। ঢাকার মতিঝিল থানার ডিএমপির আনসার ক্যাম্পে ছিল পোস্টিং। ওর বেতনের টাকা ও রেশনে চলত সংসার। আমি নিজেও মাঠ-ঘাট দেখাশুনা করতাম।
নিহত জুয়েলের পাঁচ বছর বয়সী একমাত্র ছেলে আবু হুরায়রা বাবাকে খুজে ফিরছে। বাবা তাকে ছুটিতে এসে চকলেট কিনে দেয়, ঘুরতে নিয়ে যায়। বাবাকে ফিরে পেতেও সে এখন কান্নাকাটি করছে।
জুয়েলের স্ত্রী শ্রাবণী বলেন, শুক্রবার (১৯ জুলাই) সন্ধা সারে সাতটায় আমার নিকট একটা নম্বর থেকে ফোন করে বলে জুয়েল অসুস্থ হাসপাতালে ভর্তি আপনারা চলে আসেন। অন্যদিকে তার বন্ধুদের নিকট মৃত্যুর খবর দেওয়া হয়। তখন ঢাকাতে কোটা আন্দোলনের মধ্যে বিক্ষোভকারীদের তুমুল সংঘর্ষ চলছিল । সেদিন জুয়েল আমাকে কয়েকবার ফোন দিয়েছিল। বলেছিল ঢাকার অবস্থা ভাল নয়। গ্রামেও অনেককে ফোন দিয়ে কথা বলেছে। ওর পিঠে গুলি লাগে যার চিহ্ন রয়েছে।
নিহত জুয়েলের দাদী রড় বিবি (৮০) বলেন, কি আর বলবো বাবা, আমাকে এখনো আল্লাহ নেইনি। চোখের সামনে ছেলে, নাতিকে চলে যেতে দেখতে হল।
উঠানে সাংবাদিকদের দেখে প্রতিবেশীরা অনেকে এগিয়ে আসেন। তারা বলেন জুয়েল ছিল অন্যরকম একজন মানুষ। যখন ছুটিতে বাড়িতে আসলে আশেপাশের সকলের সাথে হাসিখুশি কথা বলতো। ছেলেটিতে নিয়ে ঘুরতো।
চাচতো ভাই মোঃ রাসেল শেখ (২৮) নিজের ফোন থেকে নিহত জুয়েলের একটি ছবি দেখিয়ে বলেন, ভাই অত্যন্ত সহজ সরল ছিল। আমাদের গ্রামের দুইজন একসাথে আনসারে যোগ দেয়। জুয়েলতো আন্দোলনে নিহত হল। শনিবারে বাদ যোহর পার আশাপুর কেন্দ্রীয় গোরস্থানে ওকে সমাহিত করা হয়েছে।
দৈনিক আলোর প্রতিদিন এর প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
পাঠকের মন্তব্য: