মালয়েশিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত স্বামীর মরদেহটি শুধু দেশে আনতে চান আব্দুল মালেকের স্ত্রী
জেলা প্রতিনিধি ঝিনাইদহ
মালয়েশিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রবাসী আব্দুল মালেকের মৃত্যুর খবর জানার পর থেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা। বুধবার (৩০ আগস্ট) ভোর ৩টার দিকে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয় পরিবার।
ঝিনাইদহ শহরের পৌর এলাকার ভুটিয়ারগাতী জোয়ারদার পাড়ায় তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্ত্রী নীলা খাতুন স্বামীর ছবি বুকে জড়িয়ে কান্নাকাটি করছেন। আহাজারি করে বলছেন আমার স্বামীর মরদেহ দেশে এনে দেন। শোকাহত বাড়িতে আসা প্রতিবেশীরাও কাঁদছেন।
নিহত আব্দুল মালেক ভুটিয়ারগাতী জোয়ারদার পাড়ার ফয়েজ আহমেদের ছেলে। তার স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে প্রায় ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে দালালের মাধ্যমে পানিপথে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান আব্দুল মালেক। এরপর সেখানে তিন বছর বিভিন্ন বাগানে থাকতেন। পরে মুরগি ব্যবসায়ী নাঈমের সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপর থেকে তার কাছে থাকতে শুরু করেন। সেসময় মালয়েশিয়া সরকার পানিপথে যারা মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন তাদের বেশ কিছু মানুষকে ভিসা প্রদান করেন। তার মধ্যে ছিলেন আব্দুল মালেক।
এরপর থেকেই মালয়েশিয়ার ইপু এলাকার কলাকাঞ্চা বাজার সংলগ্ন পাড়ায় থাকতেন তিনি। সেখানে থেকে নাঈমের মুরগির দোকানে কাজ করতেন। কয়েক বছর পরপরই ঝিনাইদহের বাড়িতে আসতেন। তার পাঠানো টাকা দিয়েই চলতো সংসার।
তার দুই ছেলে কাজের সূত্রে অন্যত্র বসবাস করেন এবং মেয়ে বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতেই থাকেন। শুধু ছোট ছেলে ইমন হোসেনকে নিয়ে বাড়িতেই থাকতেন আব্দুল মালেকের স্ত্রী নীলা খাতুন।
চলতি মাসের ১৪ আগস্ট মালয়েশিয়ান সময় সকাল পৌনে ৭টায় মুরগির দোকান বন্ধ করে মোটরসাইকেলে বাসায় ফিরছিলেন আব্দুল মালেক। পথিমধ্যে ইপোকলাকাঞ্চা এলাকায় পৌঁছালে সামনের দিক থেকে আসা একটি প্রাইভেটকারের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় তার। সেসময় গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে মালয়েশিয়ার টাইপিং নামের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার ভোর ৩টার দিকে আব্দুল মালেকের মৃত্যু হয়।
নিহত আব্দুল মালেকের স্ত্রী নীলা খাতুন বলেন, তার বস নাঈম ফোন করে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। স্বামীর মৃত্যুতে আমরা খুবই অসহায় হয়ে গেলাম। আমাদের অভিভাবক আর কেউ থাকলো না। ঋণ করে স্বামী বিদেশে গিয়েছিল। তার পাঠানো টাকা দিয়ে সংসার চালাতাম। স্বামীর মরদেহ বিদেশ থেকে আনার মতো সামর্থ্য আমাদের নেই। সরকারের কাছে দাবি জানাই অন্তত আমার স্বামীর মরদেহটা যেন দেশে আনার ব্যবস্থা করে দেয়।
নিহতের ছেলে মুক্তার হোসেন জানান, আমার বাবাকে জীবিত আর দেখতে পেলাম না। কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না তার মৃত্যু। সব হারিয়ে ফেললাম আমরা। তার মরদেহ দেশে আনার মতো সামর্থ্য আমাদের নেই। সরকারের কাছে দাবি জানাই, যেন আমার বাবার মরদেহ দেশে আনার ব্যবস্থা করে। তাহলে শেষবারের মতো একনজর তাকে দেখতে পারবো।
দৈনিক আলোর প্রতিদিন এর প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
পাঠকের মন্তব্য: