ফুলবাড়ী’র নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের অধিকাংশ রাস্তার বেহাল দশা
আব্দুর রাজ্জাক রাজ, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি:-
কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলাধীন নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চর-গোড়ক মন্ডপ ও গোড়ক মন্ডপ এলাকাটি সীমান্ত ঘেষা এবং ধরলা ও বারোমাসিয়া নদীর তীরে অবস্থিত । এ লোকালয় দুটি নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পশ্চিম দক্ষিন ও পশ্চিম উত্তরে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত । এসব এলাকায় প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষের বসবাস ।এ জনপদে রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিজিবি ক্যাম্প, কমিউনিটি ক্লিনিক, আবাসন, নির্মাণাধীন মুজিব কেল্লা, মসজিদ, মন্দির , বিডিআর বাজার, আনন্দ বাজার ও হাজার হাজার একর ফসলি জমি ।এখানকার এসব কিছু স্বাভাবিক রাখতে হলে দরকার স্বাভাবিক যোগাযোগ ব্যবস্থা । কিন্তু এ জনপদে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, বার বার আকস্মিক বন্যার কারণে এখানকার প্রধান প্রধান রাস্তাগুলোর প্রায় ৯৯% রাস্তার করুন অবস্থা যা যোগাযোগের জন্য একিবারই অযোগ্য । তবে কোথাও কোথাও স্থানীয় জনগন তাদের নিজ উদ্দ্যেগে কোনমতে চলাচলের যোগ্য করে তোলার চেষ্টা করছে ।
পশ্চিম ফুলমতি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রায় ১ কি.মি পশ্চিমে এক ভয়াবহ পুরাতন ও প্রাচীন ব্রীজ দেখতে পাওয়া যায়, (বাগমারা ব্রীজ) যা গত কুড়ি বছর ধরে ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে । যা এখনও কোন কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে আসে নাই বলে মনে করে এলাকাবাসি । এই ব্রীজের পশ্চিম প্রান্ত থেকে উত্তর দিকে নেঞ্জার কুটি লোকালয় (গোড়ক মন্ডপ গ্রাম) যাওয়ার একমাত্র রাস্তাটি ধরলা ও বারামাসিয়া নদীতে বন্যার দরুন পানির চাপে প্রায় ৫০ মিটার রাস্তা ভেঙ্গে যায় প্রায় গত ৩ মাস আগে । গ্রামবাসি অনেক দিন দূর্ভোগে যাতায়াত করার পর কারো কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে এ মাসের শুরুর দিকে তারা নিজেরাই বাঁশের সাঁকো তৈরী করে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতেছে । এ নেঞ্জারকুটি নামক স্থানে রয়েছে একটি দাখিল মাদ্রসা ও একটি প্রাইমারী স্কুল ।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এখানকার নুরইসলাম নামে একজন বলেন, এই রাস্তা ভেঙ্গে যাওয়ায় আমাদের দীর্ঘ ২ মাস বাজার-ঘাট, জীবিকা নির্বাহে ব্যাঘাত ঘটে ও ছেলে-মেয়েরা ঠিকমত তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারে নাই ।আমরা স্থানীয় সরকার প্রধানকে জানায়ছি, উনার অপেক্ষায় না থেকে নিজেরাই চাঁদা তুলে বাঁশের সাঁকো তৈরী করেছি এবং ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছি ।
শ্রী কমল বিশ্বাস ও একরামুল বলেন, জন দূর্ভোগে স্থানীয় মেম্বার-চেয়াম্যানকে তেমন পাওয়া যায় না, তবে সাঁকো তৈরীতে মুক্তিযোদ্ধা ডা: হামিদুল হক খন্দকার ৩ হাজার টাকা সাহায্যে করেছেন । গোড়ক মন্ডপ এর ইউপি সদস্য জনাব শ্যামল চন্দ্র মন্ডল এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “জনগন দূর্ভোগে আমার কি করার আছে , আমার নিজেরিই জান বাঁচে না।”
অন্যদিকে চর গোড়ক মন্ডপ এরে ইউপি সদস্য জনাব আয়াজ উদ্দিনের বাসা থেকে উত্তরে আনন্দ বাজার যাওয়ার রাস্তাটি একেবারেই বেহাল অবস্থা, চলাচলের অযোগ্য । এ রাস্তার ছোট ছোট ছোট কালভার্ট গুলো বন্যায় সড়ে গিয়ে ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে ।এ রাস্তা দিয়ে একজন রোগী নয়, সুস্থ মানুষ গেলেও অসুস্থ হয়ে পড়ে ও দূর্ঘটনার স্বীকার হয় বলে এ গ্রামের বাসিন্দা এমদাদুল হক ও তার প্রাইমারী শিক্ষক স্ত্রী শেফালী ক্ষোপ প্রকাশ করেন ।
চড় গোড়ক মন্ডপ-এর আনন্দ বাজার থেকে হক বাজার ও খারুয়া বাজার যাওয়ার রাস্তাটি দিয়ে এখন যাতায়াত করলে দেখা যায় ১০০ মিটার পর পর কয়েক জায়গায় বিশাল গর্ত হয়ে পানি জমাট বেঁধে রয়েছে । পুরাতন আবাসনের একটি বিল্ডিং রাস্তার ধারেই । এ বিল্ডিং সংলগ্ন রাস্তাটি এবারের ১ম বন্যায় দৈত্য আকৃতির একটি গর্তের জন্ম দিয়েছে , যা দিয়ে কোন মতেই চলাচল করা সম্ভব নয় বলে এলাকাবাসি জানিয়েছে । উক্ত পুরাতন আবাসন থেকে ২০০ মিটার উত্তর দিকে বীর মুক্তি যোদ্ধা শামছুল হকের বাড়ির নিকটে প্রদত্ত রাস্তা দুটি’র প্রায় ৫০ মিটার করে ভেঙ্গে গভীর গর্ত হয়ে আছে । এ রাস্তাদ্বয় সম্পর্কে আমিলা নামে এক বয়স্ক মহিলা বলেন, আমি এ রাস্তা দিয়ে ভয়ে যাতায়াত করি না । কারণ এখানে অনেক বড় গর্ত আছে । প্রয়োজনে এদিক ওদিক যেতেও পারি না । হাসেন আলী ও কাইয়্যুম মিয়া বলেন, এখন তো হাটুর উপরে পানি কয়েকদিন আগে একমানুষ গভীর পানি ছিল আমরা বাজার-ঘাট করতে পারি নাই । যোগাযোগের এ বেহাল অবস্থার কারণে আমরা অতি কষ্টে জীবন-যাপন করে আসছি ।
জহুরুল হক বলেন, আমার স্ত্রীকে এ রাস্তা দিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারছি না, কখন যে কি ঘটে । অটোচালক জয়নাল বলেন, আমি অটো চালিয়ে জীবন বাঁচাই, এই ধরনের রাস্তা দিয়ে অটো বাইরে নিয়ে যেতে পারছি না, ছেলে-মেয়ে নিয়ে অতি কষ্টে আছি ।
চর গোড়ক মন্ডপ এর ইউপি সদস্য জনাব আয়াজ উদ্দিন বলেন, পর পর কয়েকবার সৃষ্ট বন্যার কারেণে রাস্তাগুলোর এ বেহাল অবস্থা । এ এলাকার ছেলে মেয়েরা ঠিকমত স্কুল-কলেজে যেতে পারছে না, রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে নিতে পারছে না, সাধারণ মানুষ যাতায়াতে দূর্ভোগের স্বীকার হচ্ছে ।এই রাস্তা এবং রাস্তা থেকে সৃষ্ট সমস্যাগুলো আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি । বরাদ্দ প্রক্রিয়াধীন । বরাদ্দ হাতে পেলেই আমরা কাজ শুরু করে দিবো ।
নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহোদয় জনাব হাসেন আলী ফোন আলাপে বলেন, রাস্তাগুলো আমি পরিদর্শন করেছি । খুব শীঘ্রই কাজ শুরু করবো ।
এলজিইডি ফুলবাড়ী উপজেলা প্রকৌশলী জনাব আসিফ ইকবাল রাজিব ফোন আলাপে বলেন, আমি এ রাস্তাগুলোর বেহাল অবস্থার খবর আপনার মাধ্যমে প্রথম শুনলাম ।যদি এ রাস্তাগুলো এলজিইডি’র গেজেড ভুক্ত হয়ে থাকে তাহলে খোঁজ-খবর নিয়ে দেখবো ।
কুরুষা-ফেরুষা থেকে খলিশা কোটালের রাস্তা বিষয়ে জানতে চাইলে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এই রাস্তাটি এলজিইডির গেজেড ভুক্ত হয়ে গেছে এবং কাগজপত্রও রেডি হয়ে আছে । আমরা এমপি মহোদয়ের নিকট গিয়েছিলাম, উনার ফান্ডে এ বিষয়ে বর্তমানে কোন বরাদ্দ নেই । বরাদ্দ আসলে এ উপজেলার সর্ব প্রথম কুরুষা-ফেরুষা থেকে খলিশা কোটালের রাস্তাটির কাজ শুরু হবে । তিনি আরও বলেন, আমরা অন্য ফান্ড থেকেও এ রাস্তাটি করার জন্য খুব চেষ্টায় আছি ।
দৈনিক আলোর প্রতিদিন এর প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
পাঠকের মন্তব্য: