কেমন কাটবে রাঙ্গুনিয়া প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঈদ
মুবিন বিন সোলাইমান, রাঙ্গুনিয়া চট্টগ্রাম:
মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর এই পবিত্র দিনে পশু কোরবানীর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি খুঁজছেন মুসলমানরা। শুরু হয়েছে ঈদুল আজহা ছুটি। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বেশিরভাগ মানুষ ছুটছেন গ্রামে। এরই মধ্যে বন্দর নগরী চট্টগ্রাম সিটিসহ উপজেলা গুলোতে শুরু হয়েছে কোরবানী ঈদের আমেজ। চট্টগ্রামে বিভিন্ন স্থানে কুরবানী পশুর হাট জমে উঠেছে কোরবানি পশু বেচাকেনা, শুরু হয়েছে সড়কের যানজটসহ ছোটখাটো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে এরই মধ্যে বিশেষ নিরাপত্তা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
২৭ জুন (মঙ্গলবার) থেকে ১ জুলাই (শনিবার) মোট ৫ দিন ছুটি পাবেন সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীরা। পশু কোরবানী মধ্যে দিয়ে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে ব্যস্ত হবে সবাই। তবে, কেমন কাটবে পেশাগত কাজে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে নিয়োজিত রাঙ্গুনিয়া প্রশাসনের অফিসার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যদের ঈদ?
দেশের স্বার্থে জনগণের ঈদের আনন্দকে বাড়িয়ে দিতে দেশে থেকেও পরিবার-পরিজনের ছাড়া প্রবাসীদের মত ঈদ কাটে তাদের। ঈদের দিনেও নেই কোন অবসর, মিলেনা ছুটি। আবার অনেকেই মহান দায়িত্ব পালন করতে পারলেই পরিবার-পরিজনের সাথে ঈদ করতে না পারার কষ্টটা ভুলে যাই।
পরিবার সকলের সাথে ঈদের আনন্দ চেয়ে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব অনেক গুণ বড় বললেন রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আতাউল গনি ওসমানী, তিনি বিষয়টি উপভোগ করেন রাষ্ট্রীয়ভাবে দেওয়া দায়িত্ব ও জনগণের সেবায় নিয়োজিত নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে। তিনি বলেন, “ঈদের দিন সকালে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ডঃ হাছান মাহমুদ এমপি স্যারের সাথে থাকবো। অবশ্য আমার পরিবার এখানেই থাকেন এবং উপজেলা সহকারী ভূমি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জামশেদুল আলমসহ আরো যারা আছেন তাদের সাথে এবার এখানে কোরবানী দিব। আপনারা যারা আছেন ও রাঙ্গুনিয়ার জনগণ সবাইকে নিয়ে আমার ঈদের আনন্দ। তবে বাবা-মা, ভাই-বোনদের সঙ্গে ঈদে থাকতে পারলে অবশ্যই বেশি ভালো লাগত। তবে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বটা যথাযথ পালন করতে পারলেই আমরা সন্তুষ্ট। এতোগুলো মানুষের সেবার দায়িত্ব পালন করাও কম আনন্দের নয়।’
এদিকে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি আবুল ফারাজ জুয়েল বলেন “ঈদের আগে কুরবানী পশু বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে এবং ঈদের দিন নিরাপত্তার দায়িত্বটা বেড়ে যায়। সাধারণত ঈদের দিন সকালে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীর ড. হাছান মাহমুদ এমপি মহোদয়ের সাথে থাকতে হবে। পরিবারের সঙ্গে ঈদের দিনটি উদযাপন করতে না পেরে খারাপ লাগে। কিন্তু চাইলেও কিছু করার থাকে না কারণ দায়িত্বটা সবার আগে।
দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার এসআই রিয়াজ ও এসআই রূপম বলেন, ‘ঈদে এতোগুলো মানুষের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করতে ভালোই লাগে। মানুষের সেবা করাই আমাদের প্রধান কাজ। সেটি করতে পারলেই বেশি খুশি হই। ঈদের দিনে একটু ব্যস্ত থাকতে হয়। পরিবার থেকে ফোন করে বাচ্চারা যখন বলে তোমাকে ছাড়া আমাদের ঈদ অপূর্ণ তখন নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে বলি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব যখন কাঁদে তখন সবার ঈদের আনন্দ পরিপূর্ণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা দিতে পেরে নিজেদের কষ্টটা ভুলে যাই।
এছাড়াও রাঙ্গুনিয়া মডেল থানা ও দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার কিছু পুলিশ সদস্যদের ঈদের অনুভূতি জানতে চাইলে তারা বলেন, আর সারাদিন নিরাপত্তার কাজেই ব্যস্ত থাকতে হবে। ফলে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার সুযোগ নেই। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ ঈদের ছুটিতে বাড়িতে যায়, সবাই চলে গেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তা কে দেবে? তারপরও আমাদের এসপি’র কার্যালয় থেকে নির্ধারিত দুই ঈদে এবং বিশেষ দিনে স্পেশাল খাবারের আয়োজন করা হয়। এতে একটি পরিবারের মত সবাই আনন্দ ভাগাভাগি করি।
রাঙ্গুনিয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের টিম লিডার মোহাম্মদ জাহেদসহ আরো কয়েকজনের সদস্য জানান, আমরা যারা ডিফেন্সের চাকরি করি আমাদের মূল মন্ত্র হচ্ছে ত্যাগ, সেবা। আমরা দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে নিরাপত্তা দিতে পরিবারের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করাটাকে সেক্রিফাইস করতে হয়। এছাড়াও আমাদের মাঝে অনেকই আছেন ছুটি দরখাস্ত করে, দেখা গেল যারা রমজানের ঈদুল ফিতরের ছুটি পেলেও তারা ঈদুল আযাহাই ছুটি পায় না। অন্তত আমাদের জন্য জনগণের ঈদ নিরাপত্তার সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারে এর চাইতে বড় আনন্দ আর কি হতে পারে।
রাঙ্গুনিয়া বন বিভাগের রেঞ্জ অফিসার নাহিদ হাসানসহ কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, ঈদের দিনে প্রত্যেকের পরিবার থেকে একটা চাওয়া পাওয়া থাকে তাদের পরিবারের সদস্য একসাথে হওয়া, আনন্দ ভাগাভাগি করা। যেহেতু সরকারি চাকরি করি সরকারের সম্পদ রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য। ঈদের আনন্দের চেয়েও দায়িত্বটা যথাযথ পালন করতে পারলেই বেশি আনন্দ পাই। সরকারের সম্পদের দায়িত্ব নেওয়াটাই গর্বের বিষয়। আমরা দেশে থেকেও প্রবাসীদের মধ্যে মতো ঈদ করতে হয়, তখন প্রবাসীদের কষ্টের অনুভূতিটা উপলব্ধি করতে পারি। দিনশেষে আমরা এক সুতোয় গাতা কেউ পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে আবার কেউ রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে পরিবার ছাড়া আনন্দ ও বিশেষ মুহূর্ত একসাথে থাকতে না পারার ত্যাগ স্বীকার করতে হয়।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন নার্স, আয়া ও কর্তব্যরত কর্মকর্তারা জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বটা সবার ঊর্ধ্বে, ঈদে পরিবার-পরিজনের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে না পারলেও দায়িত্বের খাতিরে দেশের স্বার্থে জনগণের স্বার্থে সেবায় নিয়োজিত আছি এটাই আমাদের কাছে অনেক তৃপ্তির। যদিও বা পরিবার-পরিজন ছাড়া ঈদের আনন্দ মলিন সে জায়গায় সেবা দিতে পারাটা একটা ঈদের আনন্দের চেয়েও অধিক।
দৈনিক আলোর প্রতিদিন এর প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
পাঠকের মন্তব্য: