ব্রেকিং ❯

সুজন মাহমুদ

নিজস্ব প্রতিনিধি

For Advertisement

রাঙ্গাবালী উপজেলায় শেখ রাসেলের ৫৯তম জন্মদিন পালিত।

১৮ অক্টোবর ২০২২, ৫:১৯:১৪

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল। ১৮ অক্টোবর তার জন্মদিন। প্রতিবছর দিবসটি আলোচনা সভা, শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অনাড়ম্বরভাবে পালিত হতো। সরকার সিন্ধান্ত নিয়েছে এখন থেকে প্রতিবছর রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘শেখ রাসেল দিবস’ হিসেবে দিবসটি পালিত হবে। যার মূল উদ্দেশ্য হবে- শেখ রাসেলের আদর্শ, চিন্তাচেতনাকে শিশু-কিশোর তরুণদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া।

শেখ রাসেল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ছোট সন্তান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আদরের ছোট ভাই। রাজনীতির তীর্থস্থান ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে ১৯৬৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। দীর্ঘ সাত বছর পর বঙ্গবন্ধু পরিবারে নতুন অতিথি আসার কারণে সবার মধ্যেই ছিল অন্যরকম আনন্দ উচ্ছ্বাস।

রাসেল নামকরণেরও আছে সুন্দর একটি ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা দুজনই সময় পেলে বই পড়তেন, ছিলেন নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী, দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের ভক্ত। বার্ট্রান্ড রাসেল ছিলেন পারমাণবিক যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের বিশ্বনেতা। বিশ্ব শান্তির জন্য গঠন করেছিলেন ‘কমিটি অব হান্ড্রেড’। শেখ রাসেলের জন্মের দুবছর আগে ১৯৬২ সালে কিউবাকে কেন্দ্র করে আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ চলছিল। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ যখন দ্বারপ্রান্তে তখন শান্তির পতাকা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন বার্ট্রান্ড রাসেল। বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা আগেই সিন্ধান্ত নিয়ে রেখেছিলেন যে তাদের যদি পুত্র সন্তান হয় তাহলে শান্তির দূত বার্ট্রান্ড রাসেলের নামের সঙ্গে মিল রেখে নাম রাখবেন রাসেল।

রাসেল যখন খুব ছোট তখন পিতা বঙ্গবন্ধু ছয় দফা পেশ করার কারণে দীর্ঘমেয়াদে কারাবরণ করেন। বঙ্গবন্ধু ‘কারাগারের রোজনামচা’য় শেখ রাসেলকে নিয়ে লিখেছেন-

“৮ ফেব্রুয়ারী ২ বছরের ছেলেটা এসে বলে, আব্বা বাড়ি চলো। কী উত্তর ওকে দিব। ওকে ভোলাতে চেষ্টা করলাম ওতো বুঝে না আমি কারাবন্দী। ওকে বললাম, তোমার মার বাড়ি তুমি যাও। আমি আমার বাড়ি থাকি। আবার আমাকে দেখতে এসো। ও কি বুঝতে চায়! কী করে নিয়ে যাবে এই ছোট্ট ছেলেটাকে, ওর দুর্বল হাত দিয়ে মুক্ত করে এই পাষাণ প্রাচীর থেকে। দুঃখ আমারও লেগেছে। শত হলেও আমি তো মানুষ আর ওর জন্মদাতা।”

শেখ রাসেলের বড় বোন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছোট ভাইয়ের সব স্মৃতিকে এক করে বই লিখেছেন ‘আমাদের ছোট রাসেল সোনা’। বইটিতে শেখ রাসেলের জন্মগ্রহণ থেকে শুরু করে ঘাতকের হাতে নির্মমভাবে শহীদ হওয়া পর্যন্ত জীবনের খুঁটিনাটি তুলে ধরেছেন। বইটি থেকে শেখ রাসেলের অনেক গুণাবলির তথ্য জানতে পারি।

শেখ রাসেল অত্যন্ত রাজনৈতিক সচেতন ছিলেন। পরিবারের রাজনৈতিক আলোচনা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতেন। ছোট্ট রাসেল একদিন মাকে জিজ্ঞেস করে, মা আব্বার কাছে যাবে না? মা কোনো উত্তর দেয় না। দিবে কী করে তখন যে পিতা বঙ্গবন্ধুকে ছয়মাস ক্যান্টনমেন্টে পাকিস্তানি সামরিক জান্তারা আটক করে রেখেছিল। কেউ কোনো খবরই জানত না তিনি কোথায় কীভাবে আছেন? ছেলেকে শুধু বুকে টেনে নিয়ে আদর করলেন মা।

রাসেল আবার মাকে জিজ্ঞাসা করল, মা আব্বার নাকি ফাঁসি হবে? ফাঁসি কি? মা বললেন, তোমাকে একথা কে বলেছে বাবা। রাসেল উত্তর দিয়ে বলে সেদিন কাকা, দুলাভাই আর কামাল ভাই বলেছিল আমি শুনেছি মা। এমনই রাজনৈতিক সচেতন ছিলেন রাসেল। কারাগারে বাবার সঙ্গে দেখা করতে গেলে জয়বাংলা স্লোগান দিত। এমনকি হরতালের দিনে বাসার সামনের লনে দাঁড়িয়ে হরতালের সমর্থনে হরতাল হরতাল বলে স্লোগান দিত।

আতিথেয়তা বঙ্গবন্ধু পরিবারের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। ঠিক সে গুণটিও ছিল ছোট্ট রাসেলের। গ্রামে গেলে দরিদ্র শিশু বন্ধুদের জন্য উপহার সামগ্রী ঢাকা থেকে নিয়ে যেতেন। শিশু বন্ধুদের প্রতি তার অপরিসীম দরদ ছিল। সবসময়ই তাদের কিছু না কিছু দিত।

রাসেল চঞ্চল প্রকৃতির ছিলেন। পড়তেন ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরী স্কুলে। বাসায় গৃহশিক্ষক ছিলেন গীতালি দাশগুপ্তা। শিক্ষিকাকেই শুনতে হতো রাসেলের কথা, নইলে সে মনোযোগী হতো না। শিক্ষিকাও আদর করে তাকে ম্যানেজ করেই শিক্ষাদান করেছেন। গৃহশিক্ষিকা গীতালি দাশগুপ্তা ছাত্র শেখ রাসেল সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করে বলেন-

“শেখ রাসেলকে যেটা শিখিয়েছি, সে তা কোনো দিন ভোলেনি। শেখ রাসেল একবার বলে, আমি আর অঙ্ক করব না। আমি প্রশ্ন করলে বলে, আমার ইচ্ছে করে না। এরপর আমি চিন্তা করলাম, কীভাবে শেখানো যায়। বললাম যে, তুমি স্কুলে চকলেট নিয়ে যাও? সে বলল, হ্যাঁ। আমি বললাম, একা একা খাও, তাই না? রাসেল বলল, নাহ, একা খাই না, বন্ধুদের দিয়ে খাই। তখন বললাম, এই যে তুমি দুইটা অঙ্ক রেখে দিলে, তারা কষ্ট পাবে না?

‘রাসেল বলল, কেন কষ্ট পাবে? ওরা কি কথা বলতে পারে? খুব অবাক ও। আমি বললাম, এই যে আমাদের বাংলাদেশ আছে, তেমনই একটা অঙ্কের দেশ আছে। তারা নিজেরা নিজেরা কথা বলতে পারে। কষ্ট পেয়ে যাবে। এরপর রাসেল টপ টপ করে দুটো অঙ্ক করে বলে, এখন তো আর ওরা রাগ করবে না। এখন তো আর অঙ্কের দুঃখ নেই।”

১৯৭৫ সালের ভয়াবহ ১৫ আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেট কেড়ে নেয় ছোট্ট রাসেলকে। তাকে বাবা, মা, দুই ভাইসহ পরিবার প্রতিটি লাশ দেখিয়ে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। সেদিনের প্রত্যক্ষদর্শী বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী এএফএম মহিতুল ইসলামের ভাষ্যমতে, ১১ বছরের শিশু রাসেল প্রতিদিনের মতো সেদিনও ঘুমিয়েছিল। আকস্মিক গুলির শব্দে তার ঘুম ভেঙে যায়। ঘুমভাঙা চোখে সে আতঙ্কিত হয়ে চমকে ওঠে। অবস্থা বুঝে বেগম মুজিব আদরের দুলাল রাসেলকে রক্ষায় বাড়ির কাজের লোকজনসহ পেছনের দরজা দিয়ে চলে যেতে বলেন।

পেছনের ফটক দিয়ে বাইরে যাওয়ার সময় ঘাতকরা তাকে আটক করে। এ সময় বাড়ির ভেতরে মুহুর্মুহু বুলেটের শব্দ, বীভৎসতা আর আর্তচিৎকার শুনে অবুঝ শিশু রাসেল কান্নাজড়িত কণ্ঠে ঘাতকদের বলেছিল, ‘আমি মায়ের কাছে যাব।’ পরে মায়ের লাশ দেখার পর অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে জোর মিনতি করে বলেছিল, ‘আমাকে হাসু আপার কাছে পাঠিয়ে দাও।’ ছোট্ট নিষ্পাপ শিশুর আকুতিও নরপশুদের মন গলাতে পারেনি। ঘাতকরা ভেবেছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কোনো উত্তরাধিকার রাখলে ভবিষ্যতে তাদের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারে। মাত্র ১০ বছর ৯ মাস ২৭ দিন বয়সে এই প্রতিভাবান শিশুর জীবনপ্রদীপ নিভে যায়। এমন নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।

শিশু-কিশোর তরুণদের কাছে শেখ রাসেল একটি ভালোবাসার নাম, একটি আদর্শের নাম। শেখ রাসেলের জীবনের প্রতিটি গল্প এদেশের শিশু-কিশোর, তরুণদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। তাহলে শেখ রাসেল বাংলাদেশের কোটি কোটি শিশু-কিশোর, তরুণদের প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। শহীদ শেখ রাসেলের মৃত্যু নেই, তিনি ইতিহাসের মহাশিশু হিসেবে প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন। শুভ জন্মদিন, শহীদ শেখ রাসেল!

 

মঙ্গলবার ১৮ অক্টোবর সকাল ৯.৩০ টায় উপজেলা পরিষদ এর সামনে থেকে একটি র‌্যালি বের করা হয়, র‌্যালিটি উপজেলা সড়ক পরিদর্শন করে উপজেলার চত্বরে এসে শেষ হয় । সকাল ১০ টায় উপজেলার প্রশাসনের আয়োজনে রাঙ্গাবালী  উপজেলা পরিষদ সভা কক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাশফাকুর রহমান এর সভা পতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, উপজেলা চেয়ারম্যান ডাঃ  মো. জহির উদ্দিন আহমেদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ মোঃ দেলোয়ার হোসেন, সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ সালেক মুহিত, রাঙ্গাবালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) আব্দুস ছালাম, এবং বিভিন্ন দফতরের সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারী, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, জনপ্রতিনিধি, পেশাজীবি সংগঠনসহ স্থানীয় সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

পরে কেক কেটে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন এর মধ্য দিয়ে সভা সমাপ্তি করা হয়।

For Advertisement

দৈনিক আলোর প্রতিদিন’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: